সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় পরীক্ষার্থী, তোমাদের অর্থনীতি বিষয় থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর আলোচনা করা হচ্ছে।

সবিতা রানী একজন বিধবা নারী। তার ১৮ বছর বয়সের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। তার কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। সংসারের অভাবের জন্য ছেলেটিকে পড়াশোনা করাতে পারেননি। গ্রামের অন্য দরিদ্র নারীদের পরামর্শে সবিতা রানী একটি বিশেষায়িত ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়িতে বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুলা, ফুলদানি, পাটি ইত্যাদি তৈরি শুরু করেন। তার ছেলে তাতে সহায়তা করে। কিছুদিনের মধ্যে তিনি বেশ লাভবান হন। এখন সবিতা রানী একজন সফল নারী।

প্রশ্ন : ক. 'অর্থ এমন একটি বস্তু, যা সবাই দেনা-পাওনা মেটাতে ও ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করে' উক্তিটি কে করেছেন?
প্রশ্ন : খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক কী, বুঝিয়ে লিখ।
প্রশ্ন : গ. সবিতা রানী যে বিশেষায়িত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, সেটি বাংলাদেশের কোন ব্যাংক, ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন : ঘ. সবিতা রানীর গড়ে তোলা শিল্প দেশের জন্য কি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে কর? বর্ণনা কর।

উত্তর : ক. জিডিএইচ কোল।

উত্তর : খ. যে ব্যাংক জনসাধারণের কাছ থেকে তাদের সঞ্চয় বা উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে এবং ব্যবসায়ী শিল্পপতি ও উদ্যোক্তাদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে, তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। সংক্ষেপে এ ব্যাংককে 'স্বল্পমেয়াদি ঋণের কারবারি'ও বলা হয়। জনসাধারণের কাছ থেকে গৃহীত আমানতের ওপর স্বল্প হারে সুদ দিয়ে এবং ঋণের ওপর উচ্চ হারে সুদ আদায় করে বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফা আহরণ করে। অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক প্রভৃতি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক।

উত্তর : গ. সবিতা রানী যে বিশেষায়িত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, সেটি বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামের অতি অল্প জমির মালিক, ভূমিহীন কৃষক ও অতিদরিদ্র জনসাধারণকে উৎপাদনক্ষম কার্যকলাপে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের জন্য যে বিশেষ ধরনের ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার নাম গ্রামীণ ব্যাংক। ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংক। বাংলাদেশেই সর্বপ্রথম এ ধরনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
দৃশ্যকল্পে সবিতা রানী একজন বিধবা নারী। তার ১৮ বছর বয়সের একটি ছেলে রয়েছে। তার কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। গ্রামের অন্য দরিদ্র নারীর পরামর্শে সবিতা রানী একটি বিশেষায়িত ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়িতে ছেলের সহায়তায় বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুলা, ফুলদানি, পাটি ইত্যাদি তৈরি শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি বেশ লাভবান হন। এখন সবিতা রানী একজন সফল নারী। বাংলাদেশে বেশকিছু বিশেষায়িত ব্যাংক থাকলেও কেবল গ্রামীণ ব্যাংকই দরিদ্র নারীদের জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে থাকে। ফলে সবিতা রানী যে বিশেষায়িত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন সেটি বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক।

উত্তর : ঘ. সবিতা রানীর গড়ে তোলা শিল্প দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, স্বল্প আয়ের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়ন তথা দারিদ্র্যবিমোচনে এ শিল্পের কোনো বিকল্প নেই।
সবিতা রানী যে শিল্প গড়ে তোলেন, সেটি কুটির শিল্প। কুটির শিল্প বলতে, যেসব শিল্প সাধারণত স্বল্প মূলধন, সহজলভ্য কাঁচামাল ও অল্পসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে নিতান্ত পারিবারিক পরিবেশে পরিচালিত হয় সেসব শিল্পকে বোঝায়। এরূপ শিল্পের স্বল্প মূলধন ও অল্পসংখ্যক শ্রমিক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যরা সরবরাহ করে। এসব শিল্পের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় না এবং উৎপাদন কলাকৌশল মান্ধাতা আমলের। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ এ শিল্প সহজেই স্থাপন করতে পারেন। এ দেশের উল্লেখযোগ্য কুটির শিল্পগুলো হলো হস্তচালিত তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশ ও বেতশিল্প, বিড়িশিল্প, কাঁসা ও পিতলশিল্প, শঙ্খ ও ঝিনুকশিল্প প্রভৃতি।
বাংলাদেশে এই কুটির শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। শহর ও গ্রামের বেকার লোক ঘরোয়া পরিবেশে বিভিন্ন কুটির শিল্প-কারখানা করতে পারে। এ শিল্পের কাজ নিজ উদ্যোগে সহজেই শুরু করা যায়। এসব কর্মকা-ে সামান্য পুঁজি মামুলি ধরনের যন্ত্রপাতি হলেই চলে। কাঁচামালও সহজলভ্য। দেশে এসব দ্রব্যের ব্যাপক বাজার রয়েছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এসব কাজের মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থান করে আয় বাড়াতে পারেন। মোটকথা, ব্যক্তিগত ও জাতীয় আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে কুটির শিল্পের ভূমিকা সর্বাধিক।
দৃশ্যকল্পে সবিতা রানী গ্রামের অন্য দরিদ্র নারীদের পরামর্শে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়িতে বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুলা, ফুলদানি, পাটি ইত্যাদি তৈরি শুরু করেন। তার ছেলে তাতে সহায়তা করে। কিছুদিনের মধ্যে তিনি বেশ লাভবান হন। এখন তিনি একজন সফল নারী। কুটির শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যের বলয় হতে বেরিয়ে নিজের জীবনমান উন্নয়নসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়!
সুতরাং আমি মনে করি, সবিতা রানীর গড়ে তোলা শিল্প দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

Post a Comment