প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের অধ্যায়-৯ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

# মিলন ও রিপন দুই ভাই। তারা একই সঙ্গে অনার্স পাস করেছে। মিলন চাকরির জন্য বসে না থেকে যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সরকার গৃহীত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে মাছের চাষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে রিপনের দৃষ্টিতে একজন শিক্ষিত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকের পক্ষে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়। তাই রিপন এসব না করে বন্ধুদের সঙ্গে অযথা সময় কাটাচ্ছে। সে সংসারের ওপর নির্ভরশীল। আয় তো করছেই না বরং সংসারে সে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাকরির আশায় সে দিন গোনে। কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না।
প্রশ্ন:

ক. জনসংখ্যা সম্পর্কে বাংলাদেশের স্লোগান কী?
খ. জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবিলায় সচেতনতা কার্যক্রম বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে রিপনের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা যুক্তিযুক্ত? রিপন কীভাবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে নিজেকে মানবসম্পদে পরিণত করতে পারে বুঝিয়ে লেখো।
ঘ. মিলনকে আত্মনির্ভরশীল করতে কার ভূমিকা বেশি? উদ্দীপকের আলোকে যুক্তিসহ মতামত তুলে ধরো।
উত্তর: ক.

জনসংখ্যা সম্পর্কে বাংলাদেশের স্লোগান হলো, ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট।’
উত্তর: খ.

জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবিলায় সচেতনতা কার্যক্রম বলতে বোঝায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর গৃহীত এ সংক্রান্ত নানা পদক্ষেপ। তারা পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে সাময়িকী, পোস্টার, চার্ট, নিউজলেটার, ডকুমেন্টারি ফিল্ম ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যমে জনমানসে জনসংখ্যা হ্রাসে জনমত তৈরি করে।
উত্তর: গ.

একজন শিক্ষিত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকের পক্ষে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব নয় বলে রিপন হীনম্মন্যতার পরিচয় দিয়েছে। একজন শিক্ষিত ব্যক্তির এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কেবল অপ্রত্যাশিত নয়, সমাজ ও জাতির উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতাও বটে। রিপনের উচিত ছিল পরিবার ও দেশের বোঝা না হয়ে কোনো কাজে লেগে পড়া। যেমন মিলন চাকরির জন্য বসে না থেকে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে মাছের চাষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। রিপনের উচিত আর বসে না থেকে সরকার গৃহীত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সরকার দেশের তরুণ বেকার সমাজের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। হাঁস-মুরগির খামার, মাছের চাষ, কুটিরশিল্প, কারুশিল্প ইত্যাদি।
উত্তর: ঘ.

মিলনকে আত্মনির্ভরশীল করতে সরকারের ভূমিকাই বেশি। কারণ, সরকার বেকার যুবকদের আত্মনিরর্ভশীল করার লক্ষ্যে যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক সুন্দর জীবনযাপনে সহায়তা করেছে। ফলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। বিনা খরচে সরকারি সহায়তায় মিলন প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা গ্রহণ করে মত্স্য খামারের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। মিলনের নিজের প্রচেষ্টাও কোনো অংশে কম নয়। কারণ, একজন শিক্ষিত মানুষের এ ধরনের কাজ করার জন্য দরকার উত্তম মানসিকতার। দরকার যেকোনো পেশার প্রতি সম্মানবোধ। সেই সঙ্গে সরকারি সহায়তা তার স্বাবলম্বী হওয়ার পথকে আরও প্রশস্ত করেছে। তার ইচ্ছাশক্তিতে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার মাছের চাষ, কুটিরশিল্প, হাঁস-মুরগির খামার, কৃষি খামারের ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করেছে। বেকার যুবসমাজ এসব খাতে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। মিলন অনার্স পাস করেও চাকরির আশায় বসে না থেকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। চাকরির প্রচেষ্টার পাশাপাশি সরকার গৃহীত প্রশিক্ষণের আওতায় যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সে ক্ষুদ্র ব্যবসায় অংশগ্রহণ করেছে। তার মেধা ও মননশীলতা তার পেশায় তাকে সফল করেছে। অতএব বলতে পারি, মিলনকে স্বাবলম্বী করতে সরকারের ভূমিকাই সব থেকে বেশি।
সহকারী শিক্ষক, পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

Post a Comment