রচনা 
প্রিয় পরীক্ষার্থী, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী (নেপ)-এর চূড়ান্ত প্রশ্নকাঠামো অনুসারে বাংলা বিষয়ের ১৫ নম্বর প্রশ্নটি থাকবে ‘রচনা লেখো’। সংকেতসহ ৪টি রচনার শিরোনাম দেওয়া থাকবে, একটির উত্তর লিখতে হবে। নিচে দুটি নমুনা রচনা দেওয়া হলো।


বৃক্ষরোপণ
ভূমিকা: বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। বৃক্ষ শুধু প্রাকৃতিক শোভাই বর্ধন করে না, মাটির ক্ষয় রোধ করে, বন্যা প্রতিরোধ করে, ঝড়-তুফানকে বাধা দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো। বৃক্ষ অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই বৃক্ষকে বলা হয় প্রাণের অগ্রদূত।
বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা: বৃক্ষ আমাদের পরিবেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং অন্যতম বনজ সম্পদ। বৃক্ষের পাতা, ফল ও বীজ আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। বৃক্ষ থেকে তন্তু আহরণ করে আমাদের পরিধেয় বস্ত্র প্রস্তুত করা হয়। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ দিয়ে আমাদের বাড়িঘর ও আসবাব তৈরি করা হয়। আমাদের লেখার সামগ্রী কাগজ ও পেনসিল বৃক্ষের কাঠ দিয়েই তৈরি করা হয়ে থাকে। আমাদের রোগ নিরাময়ের ওষুধও এই বৃক্ষ থেকেই তৈরি করা হয়ে থাকে।
জীবন ও পরিবেশ রক্ষায়: বৃক্ষ জীবজগেক ছায়া দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিস্তৃত বনাঞ্চলের বৃক্ষ জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে বৃক্ষ অক্সিজেন গ্যাস ছেড়ে দেয়, যা মানুষ ও অন্য প্রাণিকুল শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য গ্রহণ করে।
বৃক্ষের বর্তমান অবস্থা: একসময় আমাদের দেশের বৃক্ষ সুশোভিত অঞ্চল এবং বনাঞ্চলগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করত। আমাদের চাহিদা পূরণ করে জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনত। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আজ আর সেই দিন নেই। বাংলাদেশের আম, কাঁঠাল, সুপারি ও নারকেলবাগানের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
বৃক্ষ সংরক্ষণে করণীয়: বিভিন্ন প্রকার শিল্পের উপকরণ সরবরাহ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সীমাহীন প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বৃক্ষের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করা। দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য আমাদের প্রত্যেকের অন্তত দুটি করে বৃক্ষ রোপণ করা দরকার।
উপসংহার: বৃক্ষহীন পরিবেশ জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য হুমকি। তাই এই সম্পদের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি পূরণের জন্য লাগামহীন বৃক্ষনিধন বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ জোরদার করার প্রতি আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। ‘আসুন গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই’ স্লোগানকে যদি আমরা মিলিতভাবে গ্রহণ করি ও কাজে লাগাই, তাহলে আমাদের বৃক্ষসম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশও সুন্দর হবে।


আমাদের লোকসংগীত
ভূমিকা: ধানে ভরা, গানে ভরা আমার এ দেশ ভাই
ফুলে ভরা, ফলে ভরা এমন দেশ আর নাই।
কবি এখানে গর্ব করে যে দেশের কথা বলেছেন, সে দেশ আমাদের প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষের কণ্ঠে কত কথা, কত গান। এসব গান মাটি ও মানুষের কথা বলে, মানুষের শ্রমের ফসলের কথা বলে, বলে বহমান নদীর কথা। এসব গানের সুরে স্পন্দিত হয় জনজীবন। তাই এসব গানকে বলা হয় লোকসংগীত।
গানের বৈচিত্র্য: বাংলাদেশের গানের কথা ও সুরে ফুটে ওঠে প্রকৃতি ও জীবনের নানা দিক। গানের সঙ্গে বাজানো হয় অনেক ধরনের বাদ্যযন্ত্র। কোনো কোনো গায়ক একতারা বা দোতারা হাতে নেচে নেচে গান করেন। কেউ গান করেন গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে, কেউবা খঞ্জনি হাতে। জনজীবনকে প্রভাবিত করা এসব গানের মধ্যে রয়েছে ভাটিয়ালি, সারিগান, জারিগান, ভাওয়াইয়া, বৃষ্টির গান ও বিয়ের গান।
ভাটিয়ালি: বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের মাঝিমাল্লাদের গান ভাটিয়ালি। এ দেশের মাঝিমাল্লারা নদীপথে চলাচল করে গঞ্জ থেকে গঞ্জে, বন্দর থেকে বন্দরে। নদীর বুকে হাওয়া বয়ে যায়। হাল ধরে মাঝি তখন মনের সুখে গান ধরেন:
নদীর কূল নাই, কিনার নাই রে।
ভাটির টানে ভাসতে ভাসতে এই গান গাওয়া হয়। তাই এর নাম ভাটিয়ালি।
জারিগান: জারিগান শোকের গান, দুঃখের গান। কারবালার করুণ কাহিনি এই গানে বর্ণনা করা হয়। বছরের যেকোনো সময়ে, হাটে-বাজারে, গ্রামে-গঞ্জে এর আসর বসে। এই গানের একজন মূল গায়কের সঙ্গে একদল দোহার থাকে। গানের সঙ্গে ঢাক, ঢোল ও দোতারা বাজানো হয়।
ভাওয়াইয়া: আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর সংখ্যা কম। সেখানে যানবাহন হিসেবে গরু ও মহিষের গাড়ির প্রচলন দেখা যায়। গাড়িতে যাত্রী বোঝাই করে আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু মাটির পথ দিয়ে মৈষাল দূরের পথে পাড়ি জমায়। পথ চলতে গিয়ে মৈষাল ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে উদাস সুরে গান গায়:
ও কি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে...
মৈষালদের গাওয়া এই গানকে ভাওয়াইয়া গান বলে।
বৃষ্টির গান: আমাদের দেশে চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রচণ্ড রোদে-গরমে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর ফেটে চৌচির হয়ে যায়। খেতের ফসল শুকিয়ে যায়। আকাশে মেঘের কোনো চিহ্ন থাকে না। চাষিরা তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে এক ফোঁটা পানির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানান। এ গানগুলোকে বৃষ্টির গান বলে।
বিয়ের গান: বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময় নানা উত্সবে মেতে ওঠে এ দেশের মানুষ। বিয়ে একটি অন্যতম প্রধান পারিবারিক উত্সব। বিয়েবাড়িতে পাড়ার মেয়েরা দলবেঁধে গান গায়। গানের সুরে বিয়েবাড়ির উত্সব জমে ওঠে। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই বিয়ের গান শোনা যায়।
উপসংহার: গানের দেশ বাংলাদেশ। বহুকাল ধরে এ গানগুলো লোকের মুখে মুখে চলে আসছে। এসব গান আমাদের নিজস্ব সম্পদ।

Post a Comment

  1. খুব মধুর ও সহজ ভাষায় লেখা।আমার এ রচনা মুখস্ত করতে একটুকুও সময় লাগে নি। একবার পরেই মুখস্ত হয়ে গেছে। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete