রচনা
প্রিয় পরীক্ষার্থী, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী (নেপ)-এর চূড়ান্ত প্রশ্নকাঠামো অনুসারে বাংলা বিষয়ের ১৫ নম্বর প্রশ্নটি থাকবে রচনা লেখো। সংকেতসহ ৪টি রচনার শিরোনাম দেওয়া থাকবে, ১টির উত্তর লিখতে হবে। নিচে দুটি নমুনা রচনা দেওয়া হলো।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম

আমার প্রিয় কবি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
সূচনা: আমি হব সকাল বেলার পাখি কিংবা ভোর হলো দোর খোল কিংবা কাঠবিড়ালি কাঠবিড়ালি পেয়ারা তুমি খাও প্রভৃতি হূদয়কাড়া কবিতাগুলো পড়তে পড়তে এর রচয়িতা যে কবি আমাদের মনে স্থান করে নেন তিনি হলেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁকে বিদ্রোহী কবিও বলা হয়। তাঁর রচিত চল চল চল গানটি আমাদের রণসংগীত।
জন্ম ও বাল্যকাল: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ২৪ মে, ১৮৯৯ সালে কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ, মাতার নাম জাহেদা খাতুন। তাঁর ডাকনাম দুখু মিয়া রাখা হয়। মাত্র আট বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়ে অতি দুঃখ-কষ্টে বাল্যজীবন অতিবাহিত করেন। গ্রামের মক্তবে শিক্ষাজীবন শুরু হয় তাঁর। শিক্ষক চাচার চেষ্টায় বাংলা ছাড়াও আরবি ও ফারসিতে জ্ঞান লাভ করেন তিনি। কিন্তু স্কুলের বাঁধাধরা নিয়ম তাঁর ভালো লাগত না।
ছন্নছাড়া জীবন: লেখাপড়া ছেড়ে লেটো গানের দলে যোগ দেন নজরুল। গ্রাম থেকে আসানসোলে চলে আসেন। কাজ নেন রুটির দোকানে। সময়-সুযোগ পেলেই পুঁথি পড়তেন আর গান গাইতেন। সে সময় আসানসোলের এক দারোগা নজরুলের প্রতিভার পরিচয় পেয়ে তাঁর নিজ গ্রাম ময়মনসিংহের দরিরামপুর স্কুলে ভর্তি করে দেন। তিন বছর সেখানে থাকার পর একদিন পালিয়ে নিজের গ্রামে চলে আসেন। একপর্যায়ে স্বজনেরা তাঁকে শিয়ারশোল রাজ স্কুলে ভর্তি করে দেন।
সৈনিক জীবন: দশম শ্রেণিতে ওঠার পর প্রথম মহাযুদ্ধের জন্য সৈন্য নেওয়া হলে তিনি বাঙালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। অল্প দিনের মধ্যে তিনি হাবিলদার পদে উন্নীত হন।
সাহিত্য সাধনা: সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় সাহিত্যজীবনের সূচনা ঘটে নজরুলের। তাঁর প্রথম কবিতার নাম মুক্তি। একে একে রচনা করেন বিখ্যাত সব গান, কবিতা। বিদ্রোহী, সাম্যবাদী, মানুষ, কামাল পাশা প্রভৃতি তাঁর জনপ্রিয় কবিতা। দোলন-চাঁপা, বুলবুল, ঝিঙেফুল, ভাঙ্গার গান, বিষের বাঁশী, অগ্নিবীণা, প্রলয় শিখা, আলেয়া, ঝিলিমিলি, ব্যথার দান, বাঁধন-হারা, মৃত্যুক্ষুধা তাঁর অমর সাহিত্যকীর্তি। তিনি বহু গান লিখেছেন এবং সুরও দিয়েছেন। তাঁর হামদ-নাত হূদয়কে জাগিয়ে তোলে। আবার শ্যামাসংগীতে রয়েছে মোহনীয় সুর। তিনি সাহিত্যসাধনার পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করেন। ধূমকেতু, লাঙ্গল তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা।
বাংলাদেশে নজরুল: তত্কালীন সরকারের আন্তরিক আগ্রহ ও আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। একটি বাড়িও তাঁর নামে বরাদ্দ করা হয়। চিকিত্সার মাধ্যমে মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত রোগাক্রান্ত কবির কিছুটা উন্নতি হয়। পরে অবনতি হলে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান। এ বছরই তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে কবিকে সমাধিস্থ করা হয়।
কেন প্রিয়: কাজী নজরুল ইসলাম আমার প্রিয় কবি। কেননা তাঁর লেখা হূদয়কে আন্দোলিত করে। মানবতা আর সাম্যবাদের পাঠ তাঁর লেখাতে পাই।
উপসংহার: বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর শক্তিশালী লেখনি দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের মুক্তি অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। তাই তো তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের গৌরব।


আমার প্রিয় বই
ভূমিকা: বর্ণপরিচয়ের আগে মায়ের কাছে অনেক গল্প শুনেছি। অনেক বইয়ের কাহিনি শুনেছি। পড়তে শেখার পর গল্পের বই পড়া আমার প্রায় প্রতিদিনের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে যেটুকু সময় পাই, তা আমি গল্পের বই পড়েই কাটাই। এ পর্যন্ত পড়া আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর টুনটুনির গল্প।
বইটির সঙ্গে পরিচয়: পরীক্ষা শেষে ভাবছিলাম কী করব। ঘরে যা বই আছে ভূত দৈত্য-দানবের কাহিনিভরা সব বই পড়া হয়ে গেছে। কার্টুনের বই কয়েকটি ছিল, তা-ও পড়া শেষ। এক দুপরে এমনই ভাবনার সময় আব্বু অফিস থেকে ফিরে এসে আমার হাতে গুঁজে দিলেন ঝকঝকে মলাটের চমত্কার বইটুনটুনির গল্প।
ভালো লাগা গল্পটি: বইয়ের অনেকগুলো গল্পের মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে টুনটুনি আর বিড়াল গল্পটি। গল্পটি এই রকম: এক গৃহস্থের ঘরের পেছনে বেগুনগাছে টুনটুনি পাখি বাসা বেঁধেছে। বাসার ভেতর তিনটি ছোট্ট ছানা হয়েছে। গৃহস্থের বিড়ালটা ছিল ভারি দুষ্টু। সে খালি ভাবে, টুনটুনির ছানা খাব। একদিন সে বেগুনগাছের তলায় এসে বলল, কী করছিস টুনটুনি? টুনটুনি মাথা হেঁট করে বিড়ালকে বলল, সালাম মহারানি। বিড়াল খুশি হয়ে চলে গেল। এমনই রোজ আসে বিড়াল। টুনটুনি তাকে সালাম জানায় আর মহারানি বলে। এর মধ্যে টুনটুনির ছানাগুলো বড় হয়েছে। সুন্দর পাখা হয়েছে। একদিন টুনটুনি ছানাদের জিজ্ঞেস করল, বাছারা, তোরা উড়তে পারবি? ছানারা বলল, হ্যাঁ মা, পারব। ছানারা তক্ষুনি উড়ে গিয়ে পাশের তালগাছে বসল। টুনটুনি খুশি হয়ে বলল, এবার আসুক দুষ্ট বিড়াল।
একটু পরেই বিড়াল এসে আগের মতো জিজ্ঞেস করল, কী করছিস টুনটুনি? টুনটুনি তখন পা উড়িয়ে দূর হ লক্ষ্মীছাড়া বিড়াল বলেই ফুড়ুত করে উড়ে পালাল। দুষ্ট বিড়াল দাঁত খিঁচিয়ে মুখ উঁচিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠে বেগুনের কাঁটার খোঁচা খেয়ে নাকাল হলো। টুনটুনিকেও ধরতে পারল না, ছানাও খেতে পারল না।

উপসংহার: টুনটুনির গল্প বইটি পড়ে যে আনন্দ ও শিক্ষা আমি পেয়েছি, সারা জীবন আমার কাছে তা এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।

Post a Comment