সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রিয় পরীক্ষার্থী, ২০১৫ সালের জেএসসি পরীক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি আবশ্যিক। বিষয়টিতে মোট নম্বর থাকবে ৫০। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকবে ৮টি। ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর থাকবে ৫। আজ অধ্যায়-২ থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

প্রশ্ন: ক্লাউড কম্পিউটিং কী? এর প্রভাবে কী কী ধরনের পরিবর্তন সূচিত হয়েছে?
উত্তর: ক্লাউড কম্পিউটিং হলো ইন্টারনেট-নির্ভর কম্পিউটিং ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় যে-কেউ এটি মূল্যের বিনিময়ে ব্যবহার করতে পারবে। যে যতটুকু সেবা গ্রহণ করবে, সে ততটুকুর জন্য মূল্য দেবে।
ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের প্রভাবে তথ্যপ্রযুক্তির জগতে এক নতুন ধারার জন্ম হয়েছে। ফলে একধরনের পরিবর্তনের ছোঁয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। যেমন:
১. এখন এ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ওয়েবসাইট যেমন: yahoo, gmail ব্যবহার করে ই-মেইল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।
২. সার্চ ইঞ্জিন যেমন পিপীলিকাতে বাংলা তথ্য খোঁজার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেটি ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ব্যবহারের ফল।
৩. আগে অনেক দাম দিয়ে সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করতে হতো। এখন ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ব্যবহারকারী বা গ্রাহক সফটওয়্যার সুলভ মূল্যে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে।
৪. বিজ্ঞানীরাও এ ব্যবস্থার সাহায্যে ব্যয় কমিয়ে তাঁদের গবেষণার কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন।
৫. কম আয়ের বা ছোট বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানসমূহ আগে অনেক দাম দিয়ে সার্ভার কিনত বা কখনো কখনো কেনা সম্ভব ছিল না। তারা বর্তমানে এ ব্যবস্থায় কম খরচে সার্ভার ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে।

প্রশ্ন: সামাজিক নেটওয়ার্ক কী? সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুফল ও কুফলগুলো কী কী?
উত্তর: সামাজিক নেটওয়ার্ক বলতে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটকে বোঝায়। এ মুহূর্তে পৃথিবীর জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে ফেসবুক ও টুইটার। সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুফলের পাশাপাশি কুফলও রয়েছে। নিচে তা বর্ণনা করা হলো:

সুফলসমূহ
১. মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি।
২. সামাজিক নেটওয়ার্কে একে অন্যের সাথে ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিনিময় করতে পারে।
৩. ই-মেইল পাঠাতে পারে বা গ্রহণ করতে পারে, মেসেজ দেওয়া-নেওয়া করতে পারে।
৪. এর মাধ্যমে ভিডিও চ্যাটিং করার ব্যবস্থা আছে।

কুফলসমূহ
১. অধিক পরিমাণে সামাজিক নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীলতা সত্যিকারের যোগাযোগের অনুভূতিকে কমিয়ে দিচ্ছে। এর ব্যবহারকারীরা একেই সত্যিকারের সম্পর্ক ভাবতে শুরু করেছে।
২. বাইরে ঘুরে বেড়ানো, খেলাধুলা, মানুষের সাথে মেলামেশার দক্ষতা এবং ইচ্ছা কমে যাচ্ছে। এর ফলে মানসিকভাবে হতাশায় ভোগার আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।


প্রশ্ন: মডেম কী? মডেম কীভাবে কাজ করে, বর্ণনা করো।
উত্তর: মডেম একটি নেটওয়ার্ক যন্ত্র। মূলত টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হলো মডেম। Modem শব্দটি তৈরি হয়েছে Modulator এর Mo এবং Demodulator এর Dem—এ দুটি অংশের সমন্বয়ে। মডেম তার দ্বারা সংযুক্ত বা তারবিহীন প্রযুক্তিতে ব্যবহূত হতে পারে। এটি কম্পিউটারের ভেতরেও থাকতে পারে আবার বাইরেও থাকতে পারে। বর্তমানে DSL ও WiFi মডেম বহুল পরিমাণে ব্যবহূত হচ্ছে।
মডেম সিগন্যাল আদান-প্রদানে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডেটা পাঠানোর জন্য বহনকারী সিগন্যাল দরকার হয়। আর মডেমে ডিজিটাল সংকেতকে অ্যানালগ এবং অ্যানালগ সংকেতকে ডিজিটাল সংকেতে রূপান্তর করে প্রেরণ করে।
কম্পিউটার ডিজিটাল সংকেত তৈরি করে। তখন এর সাথে সংযোগকারী মডেমের মডুলেটর অংশে ডিজিটাল সংকেতকে অ্যানালগ সংকেতে রূপান্তর করে নেটওয়ার্কে প্রেরণ করে। এরপর প্রাপক কম্পিউটারে এ সিগন্যাল পৌঁছালে প্রাপক কম্পিউটারের সাথে যুক্ত মডেমের ডিমোডুলেটর এ অ্যানালগ সংকেতকে কম্পিউটারের উপযোগী ডিজিটাল সংকেতে রূপান্তর করে কম্পিউটারে পাঠিয়ে দেয়। এ মডেম প্রাপক ও প্রেরক উভয়ের ক্ষেত্রেই টেলিফোন লাইন ও কম্পিউটারের মাঝে যুক্ত থাকে। এ কারণে প্রেরক ও প্রাপক কোনো কম্পিউটারের জন্যই ডেটা প্রেরণ ও গ্রহণে কোনো অসুবিধা হয় না।

প্রশ্ন: হাব, সুইচ ও রাউটারের বর্ণনা দাও।
উত্তর: হাব: দুই-এর অধিক কম্পিউটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হলে এমন একটি কেন্দ্রীয় ডিভাইসের দরকার হয়, যা প্রতিটি কম্পিউটারকে সংযুক্ত করতে পারে। এ ডিভাইসকে হাব বলে। হাবের মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। নেটওয়ার্কে হাব ব্যবহার করলে তুলনামূলকভাবে খরচ কম পড়ে।
সুইচ: সুইচ হলো বহু পোর্টবিশিষ্ট কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা তথ্য আদান-প্রদান করতে সাহায্য করে। বাইরে থেকে সুইচ দেখতে হাবের মতো মনে হলেও এটি ভিন্ন পদ্ধতিতে নেটওয়ার্কের ক্লায়েন্টের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান করে।
রাউটার: রাউটার একটি বুদ্ধিমান যন্ত্র, যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি, যা দুই বা অধিক একই প্রটোকলযুক্ত নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান করে। একটি নেটওয়ার্ক হাব ও সুইচের সমন্বয়ে তৈরি হয়। রাউটার দুটি ভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে অবস্থান করে। দুইয়ের বেশি ভিন্ন নেটওয়ার্কের মাঝেও অবস্থান করতে পারে।

প্রশ্ন: হাব ও সুইচের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: হাব ও সুইচের মধ্যে পার্থক্য:
হাব সুইচ
১. ডেটা আদান-প্রদানে বাধার আশঙ্কা থাকে। ১. ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বাধার আশঙ্কা থাকে না।
২. ডেটা সিগন্যাল প্রাপক কম্পিউটারের সব পোর্ট পাঠায় অর্থাত্ নেটওয়ার্কের সব কম্পিউটারের কাছে পাঠায়। ২. প্রেরক কম্পিউটার থেকে সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় প্রাপক কম্পিউটারের কাছে ডেটা পাঠায়।
৩. পোর্ট কম। অনেক বড় নেটওয়ার্ক তৈরিতে ব্যবহার করা যায় না। ৩. পোর্ট বেশি। তাই অনেক বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।
৪. সময় বেশি লাগে। ৪. সময় কম লাগে।
৫. নিরাপত্তা কম। ৫. নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো।
৬. মূল্য কম। ৬. মূল্য বেশি।

প্রশ্ন: ল্যান কার্ড কী? বিভিন্ন ধরনের ল্যান কার্ড সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর: ল্যান কার্ড (LAN Card) হলো Local Area Network Card। দুটো বা অধিক সংখ্যক কম্পিউটারকে একসাথে যুক্ত করতে যে যন্ত্রটি অবশ্যই প্রয়োজন হয়, তা হলো ল্যান কার্ড। অর্থাত্ আমরা যদি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাই, তবে অবশ্যই ল্যান কার্ডের প্রয়োজন হবে। নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত এক আইসিটি যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রে কোনো ডেটা পাঠাতে বা গ্রহণ করতে ল্যান কার্ডের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে প্রায় সব কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাদারবোর্ডের সাথেই ল্যান কার্ড সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। তারপরও কিছু আইসিটি যন্ত্রে আলাদা করে ল্যান কার্ড সংযুক্ত করতে হয়। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন তারবিহীন ল্যান কার্ড খুবই সাধারণ। এর ফলে তারের ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আধুনিক অফিসগুলোতে তারবিহীন ল্যান কার্ডই এখন সবার পছন্দ।

প্রশ্ন: স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার কী?
উত্তর: স্যাটেলাইট: মানবসৃষ্ট যেসব বস্তু নির্দিষ্ট কতকগুলো কাজের জন্য পৃথিবীর চারদিকে মহাশূন্যের নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে পারে, তাদের স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ বলে। স্যাটেলাইটকে যদি ২৪ ঘণ্টায় একবার পৃথিবীকে ঘুরিয়ে আনা যায়, তাহলে পৃথিবী থেকে মনে হয় সেটা যেন আকাশের কোনো এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। এ ধরনের স্যাটেলাইটকে জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট বলে। আকাশে একবার জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট বসানো হলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে সেখানে সিগন্যাল পাঠানো যায় এবং স্যাটেলাইট সেই সিগন্যালটিকে নতুন করে পৃথিবীর অন্য পৃষ্ঠে পাঠিয়ে দিতে পারে। এ পদ্ধতিতে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রেডিও, টেলিফোন, মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেটে সিগন্যাল পাঠানো যায়।
অপটিক্যাল ফাইবার: পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সিগন্যাল প্রেরণে স্যাটেলাইটের পাশাপাশি অপটিক্যাল ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপটিক্যাল ফাইবার অত্যন্ত সরু একধরনের কাচের তন্তু। শব্দ বা বিদ্যুত্শক্তিকে আলোকশক্তিতে রূপান্তর করার পর তা অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অপটিক্যাল ফাইবারে যে আলোকে সিগন্যাল হিসেবে পাঠানো হয়, সেটি ইনফ্রারেড আলো এবং এ আলো আমাদের চোখে দৃশ্যমান নয়। প্রেরক যন্ত্রের মাধ্যমে অ্যানালগ বা ডিজিটাল সংকেতকে প্রয়োজনীয় মডুলেশন করে আলোক সিগন্যাল হিসেবে রূপান্তর করা হয় এবং তা অপটিক্যাল ফাইবারে প্রেরণ করা হয়। অপটিক্যাল ফাইবারে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে তা গ্রাহক যন্ত্রে পৌঁছায়। ফলে গ্রাহক যন্ত্র কিছু প্রক্রিয়াকরণ শেষে তা ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেয়। অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে অনেক বেশি সিগন্যাল পাঠানো সম্ভব হয় এবং শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে যে একটি অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে একসাথে কয়েক লাখ টেলিফোন কল পাঠানো সম্ভব।
বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবার দ্বারা যোগাযোগ এত উন্নত হয়েছে যে পৃথিবীর সব দেশই অপটিক্যাল ফাইবারের নেটওয়ার্ক দিয়ে একে-অন্যের সাথে সংযুক্ত। এখন সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিন কেব্ল দিয়ে তথ্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।
-----------------


Post a Comment