এই দেশ এই মানুষ


এই দেশ এই মানুষ

আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা বাংলাদেশে জন্মেছি। আমরা বাংলাদেশের বাঙালি। তার মানে- বাঙালি আরও কোথাও আছে নাকি? নিশ্চয়ই আছে। আমাদের এক্কেবারে পাশে-ধর, তুমি চট্টগ্রাম বা সিলেটগামী ট্রেনে চেপে আখাউড়া বেড়াতে গেলে। এই আখাউড়া স্টেশন থেকে নেমে চার/পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরুলেই পেয়ে যাবে সীমান্ত, অর্থাৎ যেখানটায় বাংলাদেশ আর ভারতের সীমানা দু-দিক থেকে এসে মিলেছে। ঐ সীমান্তের ওপারেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। ত্রিপুরার অনেকেই বাঙালি, তারাও বাংলা ভাষায় কথা বলে। তুমি যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাও, দেখতে পাবে সেসব জায়গায় নানা ধরনের মানুষের বসবাস। তারা নিজ নিজ ভাষায় কথা বলে।


(১)
এই যে এত কথা বলছি, তার একটাই উদ্দেশ্য। তা হলো- বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাঙালি হলেও তাদের ছাড়া আরও লোকজন আছে- চাকমা, গারো, মারমা, রাখাইন, সাঁওতাল, ত্রিপুরা, মুরং, তংচঙ্গা ইত্যাদি। এদের ভাষা এদের নিজেদের। দৈনন্দিন জীবনযাপন, আনন্দ-উৎসব তাদের নিজেদের। একই দেশ, অথচ কত বৈচিত্র্য। এটাই বাংলাদেশের গৌরব।
আমরা যারা এ দেশে বাস করি, তাদের সবার গৌরব। কোনো দেশে যদি নানান ধরনের নানান জাতির মানুষ থাকে, তখন সে দেশের সুখ্যাতি হয়। আমরা নানা জাতের মানুষ এই যে মিলেমিশে বন্ধুর মতো বসবাস করছি, এতেই আমাদের আনন্দ। ধর্মের কথাই ভাবা যাক। আমাদের দেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান রয়েছে, এমনকি অল্প সংখ্যক জৈন ধর্মের মানুষও আছে। এত বৈচিত্র্য খুব কম দেশেই আছে।

বাংলাদেশের এই যে মানুষ, তাদের পেশাও কত বিচিত্র। কেউ জেলে, কেউ কুমোর, কেউ কৃষক, কেউ আবার কাজ করে অফিসে-আদালতে। সবাই আমরা পরস্পরের বন্ধু। একজন তার কাজ দিয়ে আরেক জনকে সাহায্য করছে। গড়ে তুলছে এই দেশ। ভাব তো কৃষকের কথা। তারা কাজ না করলে আমাদের খাদ্য জোগাতো কে? সবাইকে তাই আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে, ভালোবাসতে হবে। সবাই আমাদের আপনজন।

এভাবেই তো সবাইকে নিয়ে আমরা আনন্দে আছি। কিন্তু সেই আনন্দ কী রকমের? একধরনের আনন্দ হচ্ছে নানা ধরনের উৎসব নিয়ে। মুসলমানদের দুটো ঈদ রয়েছে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। হিন্দুদের দুর্গা পূজা ছাড়াও এত উৎসব আছে যে, বারো মাসে তের পার্বণ লেগেই থাকে। বৌদ্ধদের আছে সারা বছরে কয়েকটি বৌদ্ধ পূর্ণিমা। খ্রিস্টানদের আছে ইস্টার সানডে, তা ছাড়া বড় দিন যেটা পড়ে ২৫শে ডিসেম্বর। এর সবই তো আমরা উদযাপন করি। 

পোশাক পরিচ্ছদও কত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের, ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচের। মিল আমাদের একটা জায়গায়-সকলেই আমরা বাংলাদেশের অধিবাসী। আরেকটা মিল আছে- অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষাভাষী। বাংলা ভাষার বাইরেও অন্য ভাষার মানুষ কমবেশি আছে বাংলাদেশ। যেমন গারো, চাকমা, মারমা, রাখাইন, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, ওড়াও- সকলেরই রয়েছে নিজস্ব ভাষা। বাংলাদেশ যেন একটা বড় বাগান। বাগানে কত রকমের গাছপালা- বড় গাছ, ছোট গাছ। কোনো গাছে ফুল ফোটে, কোনো গাছে ঝুলন্ত ফল বাতাসে দোল খায়। বাংলাদেশও সেই রকম। নানা ধরনের মানুষ, নানা ধরনের পেশা।

বাংলাদেশের জনজীবন তাই ভারি বৈচিত্র্যময়। এই দেশকে তাই ঘুরে ঘুরে দেখা দরকার। কোথায় পাহাড়, কোথায় নদী, কোথায়-বা এর সমুদ্রের বেলাভূমি। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া, বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে কয়েকদিন কাটিয়ে আসা-এভাবেও কত কিছু দেখা যায়। মানুষকে এভাবেই তো ভালোবাসতে হবে। মানুষে মানুষে মিলেমিশে থাকলেই তো ভালোবাসা জন্মাবে।

দেশকে তাই যতটা পারা যায়, কাছে থেকে দেখতে হবে। দেশ মানে এর মানুষ, জনপদ, নদী, আকাশ, প্রান্তর, পাহাড়, সমুদ্র এইসব। দেশ হলো আসলে জননীর মতো। মা যেমন স্নেহ মমতা ভালোবাসা দিয়ে আমাদের আগলে রাখেন, দেশও তেমনই তার আলো বাতাস সম্পদ দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। মাকে আমরা যেমন ভালোবাসি, দেশকেও তেমনই ভালোবাসতে হবে। দেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই সার্থক হয়ে উঠবে আমাদের জীবন।


















Post a Comment